আমাদের সময়কার এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার কথা হয়ত এখনকার জিপিএ ৫ পাওয়া ছেলে মেয়েরা কখনো অনুভব করতে পারবে না। আবার আমাদের আগের প্রজন্ম যারা ছিল – তারা ও বুঝতে পারবে না। কেননা ৫০০০ MCQ মুখস্ত করে ৫০০ নম্বর তুলে ফেলতে পারত তারা। আমরা ছিলাম এমন একটা শিক্ষা ব্যবস্থার সময় – যখন ছিল সত্যিকারের মেধা যাচাই এর স্বর্ণ যুগ। কেন?
প্রথমত, সেই সময়কার শিক্ষা মন্ত্রী হয়ত উচ্চ পাশের হার কে সফলতা অনুধাবনই করতে পারেন নাই। পারলে হয়ত জিপিএ ৫ নামের এই রকম উদ্ভট শিক্ষা ব্যবস্থার অবতারণা তখনই করে ফেলতেন। এখন নম্বর তোলা কতটা সহজ বা কতটা কঠিন সেই প্রসঙ্গে নাহয় না ই গেলাম। সে এক বিরাট ইতিহাস হয়ে দাড়াবে।
আমি ছিলাম মাঝারি গোছের ছাত্র। তাই পরীক্ষার খাতায় প্রাপ্ত নম্বর এর প্রথম টার্গেট ছিল লেটার (মানে ৮০+)। রেসাল্ট বলার সময় যত বেশি বিষয়ে লেটার তত ভাব চলে আসত। এখনকার জিপিএ ৫ কিন্তু ওই আমাদের সময়কার লেটার মার্কই। আমার মত ছাত্ররা ৫/৬ টা লেটার পেয়ে অনেক খুশি হতাম। কিন্তু কিছু পাগল ছিল যারা আমাদের মত ছাত্র দের ২/৩ গুন বেশি পড়ালেখা করত। এই ২/৩ গুন বেশি পড়ালেখা করে হয়ত আমাদের থেকে গুটি কয়েক (৮/১০ কিংবা ১৫) নম্বর বেশি পেত। এই গুটি কয়েক নম্বর বেশি পেয়ে ও তাদের কে বলতে হত লেটার মার্ক পেয়েছে। এখনকার জিপিএ ৫ এর হিসাবে আমি আর ওই পাগল গুলার ফলাফলের মধ্যে কিন্তু কোনো তফাত নাই। ৮০ পাওয়া যা ৯০/৯২ পাওয়া ও তা।
বাবারা – তখনকার পরিস্থিতি কিন্তু তা ছিল না। লেটার মার্ক এর উপরে পাওয়া ওই ৮/১০ নম্বর ও বিশার ফারাক করে দিত। কে কোথায় ভর্তি হবে – কে কোন বিষয় এর উপযোগী তা নিরুপন হত ওই নম্বর গুলোর উপর ভিত্তি করে। ২/৩ গুন কষ্ট করে পাওয়া ৮/১০ বেশি নম্বর ই বলে দিত কে কতটা সিরিয়াস ছাত্র/ছাত্রী এবং সেই অনুযায়ী নিরুপন হত তাদের (আমাদের) ভবিষ্যত।
বাংলাদেশের ক্রিকেট এর অবস্থা এখন আমার মত মাঝারি গোছের ছাত্রের মত। বড় দল গুলার সারিতে তো এসে পড়েছে ঠিক ই – কিন্তু ঐযে ৮০ আর ৯০ এর ফারাক টা রয়ে গেছে। মাত্র ১০ নম্বর বেশি পাওয়ার জন্য যেমন ২/৩ গুন বেশি পরিশ্রম করতে হত – তেমনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে এইটুকুন ফারাক দূর করার জন্য ২/৩ গুন বেশি পরিশ্রম করতে হবে। ৮০ থেকে ৯০ পাবার জন্য শুধু মাত্র বই নিয়ে বসে থাকলে ই হত না। অতিরিক্ত পড়ালেখার পাশাপাশি অনেক ধরনের কৌশল অবলম্বন অত্যাবশ্যকীয় ছিল। বাংলাদেশ দল কে ও তেমনি সারা দিন ব্যাট বল দিয়ে লাফঝাপ করালে এর উন্নতি হবে না। দরকার যথাযথ কৌশল এর। একটা দুর্বল/মাঝারি মানের ছাত্রের যেমন রাতারাতি ভালো ছাত্রে পরিনত হওয়া সম্ভব না – একটা ক্রিকেট দল কে ও রাতারাতি বিশ্বমানের করা সম্ভব না। ক্রিকেট হচ্ছে পরিকল্পনার খেলা। খেলোয়ারদের যোগ্যতার পাশাপাশি দলীয় কৌশল ও বিরাট ভূমিকা রাখে। মাঠের বাইরের অনেক কিছু ও দলের ফলাফলের উপর ভূমিকা রাখে। আজকে যে দেশগুলার কাছে হেরে যাওয়ার কারনে আমরা আমাদের খেলোয়ারদের অপদস্ত করতে দিধা করি না – সেইসব দেশের ক্রিকেট এর ইতিহাস শতবর্ষ পুরানো। সেইসব দেশের খেলোয়াররা যা পরিশ্রমিক পায় – তার ১০ ভাগের এক ভাগ ও হয়ত আমরা আমাদের ছেলেদের দিতে পারি না। আমাদের কে এইসব বাস্তবতা মেনে নিয়ে আবেগ কে সংযত করতে হবে। দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে যাদের পাঠিয়েছি তাদের কে আজ আমরা অপদস্ত করতে পিছপা হই না। মাশরাফি – তোমাদের অর্জন যতটুকু ই হোক না কেন আমরা তোমাদের নিয়ে গর্বিত – সেই সাথে আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃক্ষিত।