৯ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত সপ্তাহের ৫ দিন কাজ করতে গিয়ে আমরা হাপিয়ে উঠি। ২ টা দিন ছুটি যেন কোনো ভাবেই যথেষ্ট নয়। বোরিং জীবনটাতে টিভি, ইন্টারনেট, ফেসবুক, বন্ধুদের সাথে আড্ডা ইত্যাদির পরেও কোথাও ঘুরতে না গেলে কয়েকদিনের মধ্যে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে।
আমাদের বাচ্চাগুলার কথা চিন্তা করেন – সপ্তাহের ৫ দিনের এক বেলা করে স্কুল, টিচার, হোমওয়ার্ক – কত কষ্ট। ওদের কষ্ট যেন আমাদের কষ্টকে ও হার মানায়।
জীবন কত কঠিন – তাই না?
জীবন আসলে এর চাইতে ও কঠিন—
বাসায় থাকা কাজ করার মানুষগুলার কথা চিন্তা করেন তো একটু। আমাদের অনেকের বাসায়ই ছোট ছোট বাচ্চা গুলো কাজ করতে আসে। অনেক ক্ষেত্রেই জন্ম দিয়ে ই তাদের বাবা মায়ের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। ফেলে রেখে যায় আমাদের ইট কাঠ পাথরের জেল খানায়। ছোট বয়সে যখন বাবা মায়ের আদরে বড় হবার কথা – তখন দিন রাত কাজ করতে হয় তাদের। বোনাস হিসাবে বকাঝকা, মারধর ইত্যাদি তো আছেই। দিনের পর দিন – কোনো ছুটি ছাড়া ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে যেতে হয়। শরীর খারাপ লাগছে? কাউকে বলার নাই। কেউ নাই যত্ন নেয়ার।
কি করবেন? ওদেরকে কাজ থেকে বের করে দিবেন? এইটা আপনি আমি যেমন পারব না – তেমনি এটা তাদের জন্য ও হয়ত ভালো হবে না। তাদের ভরণ পোষণ যদি তাদের বাবা মা করতেই পারত – তাহলে তো তাদের আর আমাদের বাসায় কাজ করতে পাঠাত না।
আমরা তাহলে কি করতে পারি? অনেক কিছুই পারি। প্রথম যা করতে পারি তা হলো আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। সপ্তাহের একটা দিন আমরা তাদেরকে কাজ ছাড়া তাদের মত থাকতে দিতে পারি। আমাদের ছুটির দিনটিতে আমরা নিজেরা কাজ করে তাদেরকে একটু রেহাই দিতে পারি। কাজ করতে করতে তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা পারি কাজের পাশাপাশি তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা। স্কুলে পাঠানো না গেলেও সপ্তাহে ২/৩ ঘন্টা আমরা এদের শিক্ষার পিছনে আমাদেরকে নিয়োজিত করতে পারি। আমরা পারি তাদেরকে একটু ভালো কিছু খেতে দিতে। আমরা পারি তাদের একটু বিনোদন এর ব্যবস্থা করে দিতে। কাজ করতে গিয়ে ভুল হতেই পারে। আমরা পারি তাদের ওই ভুল গুলোকে সহজভাবে নিতে এবং বকাঝকা না করতে।
রাস্তায় পথশিশুদের কষ্ট দেখে আমাদের চোখ জলে ছলছল করে উঠে। অথচ আমাদের বাসায় কাজ করা লোক গুলো যে জেলখানার মত পরিবেশে দিন কাটাচ্ছে তা আমাদের অগোচরেই থেকে যায়। বিধাতা সবাইকে সমান ভাগ্য দিয়ে পাঠায় না। চিন্তা করুন আপনার সন্তান যদি ঐরকম একটা দরিদ্র সংসার ও জন্ম নিত – তাহলে তাকে আজকে ওই অমানুষিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হত।